ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় প্রশাসনের নাকের ঢগায় ‘গ্লোরিয়ার্স কোচিং সেন্টার’ এর রমরমা বানিজ্য

11
00
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা সদরে প্রশাসনের নাকের ঢগায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নির্বিঘেœই চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ কোচিং বানিজ্য। হঠাৎ গড়ে উঠা ‘গ্লোরিয়ার্স কোচিং সেন্টারে’ প্রতিদিন চলছে সরকার বিরোধী নানান ধরনের ষড়যন্ত্র। এছাড়াও ওই কোচিং সেন্টার পরিচালনার শিক্ষক হিসেবে যারা নিয়মিত পাঠদান করছেন তারা বেশিরভাগই চট্টগ্রামের বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় জড়িত জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী। যাদের অধিকাংশরই বাড়ি পেকুয়ার বিভিন্ন এলাকায়। পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের চোখ কে ফাঁকি দিয়ে উপজেলা সদরের চৌমুহুনীর পশ্চিম পার্শ্বে বিএনপি নেতা হেনাউল ইসলাম চৌধুরীর মালিকানাধীন মরহুম ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী মার্কেটের ২য় তলা ভাড়া নিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ‘গ্লোরিয়াস কোচিং সেন্টারের’ নামে চলাচ্ছে রমরমা বানিজ্য। চট্টগ্রামের অবস্থান করা পেকুয়ার চিহ্নিত জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা প্রশাসনের নাকের ঢগায় নির্বিঘেœ ওই কোচিং সেন্টার পরিচালনা করায় স্থানীয়দের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। আর ওই কোচিং সেন্টারে আসা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়িতই কৌশলে মগজ ধোলাই করা হচ্ছে।
গোপন সুত্রে জানা গেছে, এ কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আয়কৃত অর্থের বিপুল পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনায়। এ কোচিং সেন্টার পরিচালনায় রয়েছেন ১২ জন। এরা প্রত্যেকই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথেজড়িত রয়েছে।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় জামায়াত শিবিরের পরিচালনাধীন ওই কোচিং সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রমরমা বানিজ্য চালালেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
জানা গেছে, পেকুয়া শেখের কিল্লাহ ঘোনা গ্রামের মো. শওকতের পুত্র, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের শিবির নেতা মো. শাহাজাহানের নেতৃত্বে প্রায় এক ডজন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ওই কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করছেন। কোচিং সেন্টার পরিচালনায় তাদের নানাভাবে সহায়তা করছেন পেকুয়া উপজেলা জামাযাতের বেম কয়েকজন দায়িত্বশীল। এছাড়াও পেকুয়া জিএমসি ইনষ্টিটিউশনের কয়েকজন প্যারা শিক্ষকও ওই কোচিং সেন্টারে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করাচ্ছেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরে র‌্যাব, পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরধারীতে এসব শিবির ক্যাডাররা চট্টগ্রামের কোথাও রাজনৈতিক সহিংসতার পরিকল্পনা নেওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় তাদের জন্মস্থানকে বেঁেচ নিয়ে কোচিং সেন্টারের নাম দিয়ে পেকুয়ার কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের কে শিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম সর্ম্পকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে পেকুয়ায় জামায়াত-শিবিরের শিবিরের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি করতে ওই কৌশলে ওই কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিবিরের রাজনীতিরদিকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে।  এ কোচিং সেন্টার পরিচালনার সাথে জড়ি সবাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির  সাথে জড়িত। কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়ার সুযোগে বিভিন্ন ছাত্রীর সাথে শিক্ষকরা গড়ে তুলে প্রেমের সর্ম্পক।
এদিকে স্থানীয়রা জানায়, সরকার কোচিং সেন্টার বন্ধের বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন জারী করলেও কোন কাজই হচ্ছে না পেকুয়ায়। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরাই প্রকাশ্যেই পেকুয়ায় প্রশাসনের নাকের ঢগায় কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তা বন্ধে কোন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন প্রশাসন।
কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই কোচিং সেন্টারের সাথে পেকুয়া মডেল জি এম সি ইনষ্টিটিউশনের প্যারা শিক্ষকরা জড়িত রয়েছেন। ফলে স্কুলে গিয়ে কোচিং সেন্টারে আসার চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। এদিকে স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা কোচিং সেন্টারে পড়ে নিয়মিত স্কুলে ক্লাস করতেছে না। বাড়ি থেকে স্কুলে আসার কথা বলে কোচিং সেন্টারে ক্লাস করে সারা দিন ছাত্ররা খেলাঘরসহ বিভিন্ন সিনেমা হলে এবং ছাত্রীরা বান্ধীর বাসা না হয় বিভিন্ন জায়গায় এবং কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠে। ফলে প্রতিদিন স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে নানা ধরণের ঘটনা ঘটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই কোচিং সেন্টারে প্রতি ছাত্রছাত্রীদের মাসিক ফি ১২০০/১৫০০ টাকা। অভিভাবকরা সচেতন না হওয়ার ফলে অনেক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। সেসব টাকার কিছু অংশ নিজেরা নিয়ে নেয় এবং বাকী টাকাগুলো জামায়াত শিবিরের কাজে ব্যয় করছে বলে গোপন সূত্রে জানা যায়।

পেকুয়ার বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, কোচিং সেন্টার গুলোতে সপ্তাহে এক বিষয়ে এক দিন করে ক্লাস নেয়া হয়। আর কোচিং সেন্টারে যারা শিক্ষক রয়েছে তারা একজনই সরকারী কিংবা বেসরকারী বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ নাই। তাহলে তারা কিভাবে বর্তমান সৃজনশীল শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করবে তা বোধগম্য হচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে জানার জন্য জামায়াত-শিবির পরিচালিত ওই কোচিং সেন্টারের প্রধান পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতা, পেকুয়া শেখের কিল্লাহ ঘোনা গ্রামের মো. শওকতের পুত্র শাহাজাহানের সাথে মুঠোফোনে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার কোচিং সেন্টার নিয়ে এর আগেও আমাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেও সাংবাদিকরা কিছুই করতে পারেনি। এবারেও লিখে কিছুই করতে পারবেনা। এক পর্যায়ে ওই শিবির নেতা বলেন, অফিসে যেতে পারেন প্রয়োজনীয় সব তথ্য আপনারা (সাংবাদিকরা) ওখান থেকে নিতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাফুজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে। শীঘ্রই ওই কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা যায়, সরকার কোন কোচিং সেন্টার কে অনুমোদন দেয়নি। সকল কোচিং সেন্টার অবৈধ। সরকারের পক্ষ থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধের প্রজ্ঞাপন রয়েছে।

পাঠকের মতামত: